Monday, October 12, 2009

আমাদের কী নাম?

আমাদের কী নাম?

টোকন ঠাকুর
...আকাশ অংশত মেঘলা থাকবে, হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা... ছিল; কিন্তু বৃষ্টি এলো ঝেঁপে ঝেঁপে, ঝাক্কাস্! আধুনিক আবহাওয়া বার্তা উড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি হলো মহানগরে, একে সুশীল সমাজ আখ্যা দেবে অনিয়ন্ত্রিত নাগরিক বৃষ্টি! কেউ ভিজেছে, কেউ ভিজতে পারেনি, কেউ ভিজবে ভিজবে ভেবেও শুধুমাত্র ভদ্রলোক হওয়ার সংকটে যেনো ‘কোনোদিন ভিজিবে না সে’ বক ও বালক যেভাবে যায়, ভিজে, সম্পূর্ণ ছোটবেলা বৃষ্টিকণার গুঁড়োর মধ্যে বুড়ো হয়ে যায়, কারণ? প্রজ্ঞাপনের ধারা বলছে, কারণ বলা বারণ।

...সুতরাং মাদকবিক্রেতার মেয়েটি এবার এইটে উঠেছে, উঠুক। মাদকবিক্রেতার বাসার এক চিলতে বারান্দায় টব, টবে শান্তারই ক্লাসমেট হয়ে ফুলেরা ফুটেছে, ফুটুক... আমরা মাদকবিক্রেতার বউকে নিয়ে বেশিদূর এগোবো না, যেহেতু ছয় ইঞ্চির ফান্তার কাছে বারো বোতল কোনো নেশাই নয়; অতএব ফান্তা আছে, এইটের ছাত্রী শান্তা আছে, আমাদেরও অবস্থা এমন, ছোট ছোট ফুল হলুদ মনের মধ্যের আলপথের উপরে দাঁড়ানো বাবলা গাছের- যাই মাদকবিক্রেতার বাসায়, কিসের আশায়... কেউ জানি না। নাকি জানি? জানি যে, বখরা কম পেয়ে পুলিশ এসে হানা দিলে শান্তার বাপ ধরা খাবে, বেশ কয়েকদিন জেলেও থাকবে। সেই কয়েকদিন আমরা কি করব দুনিয়ায়? শান্তার মাকে সংসার সামলাতে হবে, কিন্তু শান্তাকে সামলাবে কে? শান্তা যদি স্কুল-ফিরতে দেরি করে, গলির মোড়ে আমরা কি বেকার হয়ে থাকব? আমরা কী জ্বর ঠাণ্ডাকে তোয়াক্কা না করে বৃষ্টি এলেও গলির মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকব? অফ দা রেকর্ড, বলি, আন্ডারওয়ার্ল্ডে যতরকম নেশা আছে, তার মধ্যে শীর্ষ নেশা শান্তা- এইকথা ভুবন বলেছে, ভুবন আমাদের বন্ধু, তরুণ কবি, মফস্বলে তার মা-বাবার সংসারে কিছু পুরাতন কবিতার খাতা ও ডালিয়ার ছোটবোন মৃগয়া রয়েছে! আশ্চর্য!! ডালিয়া হচ্ছে ফুল, শীত পেলেই সে ফোটে, মৃগয়া হচ্ছে ভুল, বনের মধ্যে ছোটে...

কিন্তু আমরা ফুটব না, আমরা কোথাও ছুটব না, আমরা গলির মধ্যেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজব, কুঞ্জবিহারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে আমাদের নেশা আসবে, নেশার নাম শান্তা, শান্তার বাপ জেলে গেলে আমাদের নেশা আরো বেড়ে যাবে

আমরা কারা? আমাদের কী নাম? আমরা কেন বৃষ্টির মধ্যে গলিতে ভিজব? গণমাধ্যমও জানে না, আমাদের বেলা কী করে কাটে? পরিবারে আমাদের যাই নাম থাক, বাংলা একাডেমির অভিধানে লেখা, উচ্ছন্নে যাওয়া আমাদের ডাকনাম- বখাটে
বখাটেরা বৃষ্টিতে ভিজবে, সম্পূর্ণ নেশায়- এরচেয়ে আর কিছু সত্য নেই আমাদের জ্ঞানে...

১১ অক্টোবর ২০০৯, নিউ এলিফ্যান্ট রোড

মনে থাকবে
বাগানে তুই হাসনাহেনা
উপচে পড়া ভাতের ফেনা
খুব’চে পড়া ভালো ছাত্রও
কে বলে রে ফেল করে না?

ভালো ছাত্র ভালো নেই রে
উড়ুৎফুড়ুৎ ধেই ধেই রে
তুই কি কিতাব- তোকে পড়তেই
হারাই হারাই খেই খেই রে...

হাসনাহেনা বাগানে তুই
তুতো বোন তোর জবা ও জুঁই
ভালো ছাত্র ভুলিয়া যায়
কোনটা এক আর কোনটা দুই?

কোনটা একাই এগারোজন
কোনটা কোথায় খুঁয়াইছে মন!
হাসনাহেনা- তোর জন্যেই
ভালো ছাত্র খারাপ এখন

ভালো ছাত্র- হেনা-ভক্ত
‘না’ বললেও নেশাশক্ত
কি দিলি আর কি দিলি নে
গন্ধব্যাকুল হয় রক্ত!

গন্ধ শুঁকেই ফেল করেছে
ফুলের জন্যে ভুল ধরেছে
দু’একজনের মনে থাকবে
কার জন্যে কে মরেছে?

২ সেপ্টেম্বর ২০০৯, নিউ এলিফ্যান্ট রোড

Wednesday, October 7, 2009

বসন্তদিন

রহস্যপুর গল্পটা পড়া শেষ হয়নি
আমি সিরিয়াস পাঠক। পড়তে পড়তে পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা এগিয়ে যাই, তাকিয়ে দেখি গল্পের মধ্যে সোনার ঢেঁকি... পাড়ের শব্দও শুনি। ঠিক তক্ষুণি, পর্দাজুড়ে দৃশ্যমান, হাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে দইঅলা বলে একটা চরিত্র, আমি তার পিছু পিছু এগিয়ে যাই কয়েক পৃষ্ঠা; হঠাৎ সামনে পড়ে পোড়ো রাজবাড়ি, রাজবাড়িটা ভাঙা ভাঙা এবং ভৌতিক... ভীতিলুব্ধ সিঁড়িতে একটা প্রজাপতি, আমি প্রজাপতিকে ল করে উপরে উঠতে থাকি। প্রত্নকোঠার ছাদের কিনারে গিয়ে বলি, ‘প্রজাপতি, তোমার আত্মজীবনী আমি মুখস্থ করতে চাই’, শুনেই, ডানাঅলা এই প্রায় পাখিটি উড়ে যায়। এবার আমিও উড়তে থাকি প্রায়পাখিটির সঙ্গে, পৃষ্ঠার পরে পৃষ্ঠা, বাক্যের পর বাক্য, শব্দের পরে শব্দ, প্রয়োজনীয় নৈঃশব্দ... প্রজাপতি, আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তুমি কি কোনো বংশিবাদক, সুরের ফাঁদে ষড়যন্ত্র করছ? ট্র্যাপ করে পাহাড়ের দিকে টানছ?


রহস্যপুর গল্পের তেইশতম পৃষ্ঠায় সেই হাইডআউট লোকেশন, পাঠক যেখানে অসহায়, দুরুদুরু-সন্ত্রস্ত কিন্তু এগিয়ে যেতে উৎসাহী। প্রতিষ্ঠিত অন্ধকারে মুখোমুখি এক মায়াবী অধ্যায়: আলো হয়ে প্রকাশিত নারী, নারীর সর্বাঙ্গে সদম্ভ আগুন, অহোরাত্র নারীকে পড়তে গিয়েই আগুনে পুড়তে হয়... এই নিয়তি নির্ধারিত বলে, মন পুড়ে যায়। পোড়া মন চিকিৎসাধীন... নার্সও দেখতে প্রায়নারী, মাসান্তে বেতনপ্রাপ্তা।


আমি রহস্যপুর হাসপাতালে শুয়ে আছি, গল্পের মাঝামাঝি কোনো পৃষ্ঠায়। ...খুবই জানি, সুস্থ হলেই আবারও সেই ষড়যন্ত্র, প্রজাপতির। হয়তো আমারও খুব ইচ্ছে করবে, তার ডানার খোপের অন্ধকারে রং মেখে ঘুমিয়ে থাকি, জাগি। বোঝাই তো যাচ্ছে, এরপর গল্পে একটা খুন এসে যাবে। টিকটিকিরাও জানাচ্ছে, চিরকালই খুনের প্রেরণা নারী। সিরিয়াস পাঠক আমি, হিট লিস্টে আছি, সুতরাং খুন হয়ে যাব- এই ভয়ে অসুস্থ থাকি। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে (জন্মদোষে) নার্স ও নারীর আন্ত:পার্থক্যটুকু ধরার চেষ্টা করছি, পড়ার চেষ্টা করছি... আমার পোড়ামন চিকিৎসাধীন


এদিকে বসন্তদিন...


দৈনিক প্রথম আলো সাময়িকী ০৩ এপ্রিল ২০০৯

Thursday, August 6, 2009

শিক্ষাসফর

বিষাদে জন্ম মেয়ের
ও কুমারী
আমিও বিষাদ...
আমার কৌমার্যে আমি
বেদনার বরপুত্র-
আ-মরি বিষাদ যদি নাও
শিক্ষা সফরে আজ উড়ে যাব
সম্বিৎ উধাও...


ও তুলোবীজ তন্ত্রদাতা তর্পণে আজ মন
দেথতে দেখতে ফিরে এলাম দগ্ধ ফণায়ন
ভুল ভেঙেছে শত্রুগোলাপ- মহার্ঘ শিমুল
আজ দেখেছি কাশের হাওয়া... কাশ হয়ে যাক চুল

ও তুলোবীজ স্বপ্নবাড়ি-র বেড়া ও ছাদ খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে-
আমি তো ওর সঙ্গে যাব ও তুলোমেঘ ভাই
একলা মেয়ে উড়বে কি গো- বর থাকা তো চাই...

এসব কথা যাক্বেই বলি যেমন ধুলো... পাখি
মাছও বলে- আমরা জলে এইরকমই থাকি...

ও তুলোবীজ সন্ধ্যাতারা এই যে দিলে আলো
পড়শিরা খুব আহত আজ- বিজ্ঞরা চমকালো!
তাতে আমার কী এসে যায় ও সখা শাল্মলি
মাছির ডানায় উড়িয়ে দিলাম ছোট্ট শহরতলি

ও তুলোবীজ সিদ্ধিদাতা শেকড়বাকড় খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে...

দূরসম্পর্কের মেঘ ১৯৯৯